আজ, সোমবার | ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১০:৫৩

ব্রেকিং নিউজ :
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর মাগুরায় ঋষিপাড়ার সদস্যদের মধ্যে কৃষিব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ বিতরণ মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী

শহীদ মুন্সী মুজিবর : আজও চোখের জল ফেলে তাঁর স্বজনেরা

জাহিদ রহমান : ১৩ আগস্ট। ৭১ এর এইদিনে মাগুরা জেলার হাজীপুর গ্রামের মুন্সী মুজিবর রহমানকে কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে মাগুরার রাজাকাররা। পরের দিন ১৪ আগস্ট পারনান্দুয়ালী ডাইভারশান ক্যানেলের পাশে মুন্সী মুজিবরের লাশ পাওয়া গেলেও কারো পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

১৩ আগস্ট মজিবর মুন্সীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পারনান্দুয়ালীর মুন্সী আব্দুল ওয়াদুদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করতে থাকেন। কিন্তু জীবিত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। তাঁর মৃতদেহ পারনান্দুয়ালী ডাইভারশন ক্যানেলের ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে বলে পরের দিন সবাই জানতে পারেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, রাজাকাররা পারনান্দুয়ালী ডাইভারশন ক্যানেল এলাকাতে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে এনে হত্যা করে ফেলে রেখে যেত। মুন্সী মুজিবর রহমান তৎকালীন মাগুরা মহকুমা ভূমি অফিসে চাকরি করতেন। মাগুরা জজ কোর্টের পাশেই ছিল ভূমি অফিস। ১৩ আগস্ট তিনি নিজ অফিসে যান। কিন্ত অফিস থেকেই তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায় শহরের সমস্ত দুষ্কর্মের হোতা রিজু ও কবীরের নেতৃত্বাধীন রাজাকার গ্রুপ। অনুসন্ধানে জানা যায়, মুন্সী মুজিবরের পুরো পরিবারই ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। নিজ এলাকা হাজীপুর এবং মাগুরা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে এবং গ্রামের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে অনুপ্রাণিত করার কারণেই তিনি স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তাঁর ভাই মুন্সী গোলাম ইউসুফ ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকবাহিনীর প্রধান। যিনি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তরুণদেরকে সংগঠিত করে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। একসময় বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন মুন্সী গোলাম ইউসুফ। মুন্সী মুজিবর রহমান ছিলেন এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের জন্যে নিবেদিত এক প্রাণ ছিলেন। জনকল্যাণমূলক কাজে তিনি সর্বাগ্রে থাকতেন। হাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি সবসময় বুকে লালন করতেন। আর তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পুরো পরিবারকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত এবং নেতৃত্বদানে উদ্বুদ্ধ করেন। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে ৭২ সালে মামলা দায়ের করেছিলেন তাঁর স্ত্রী মরিয়ম রহমান। এই মামলার আসামীরা হলেন-কুখ্যাত রাজাকার আইয়ুব চৌধুরী, রিজু, কবীর সহ অন্যান্যরা। এই মামলার বেশ কয়েকবার শুনানীও হয়। কিন্তু পরর্বীতে এই মামলা আর অগ্রগতি হয়নি। দেশের জন্যে মুন্সী মুজিবর রহমান প্রাণদান করলেও তাঁকে স্মরণে রাখতে মাগুরাতে দৃশ্যমান কিছুই করা হয়নি। এ বিষয়ে তাঁর সন্তানদের মাঝে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে।

এ বিষয়ে শহীদ মুন্সী মুজিবর রহমানের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট লুত্ফুল হাকিম নওরোজ বলেন, কয়েকটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাজাকার-আলবদর চক্র তাঁর পিতাকে ঠান্ডামাথায় সুকৌশলে হত্যা করেছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল-হাজীপুর এলাকাতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে যে শক্তিশালী দল গড়ে উঠেছিল সেটাকে স্তব্ধ করে দেওয়া এবং মুজিবর মুন্সীর মতো একজন ব্যক্তিত্বকে হত্যা করে এলাকায় এক ধরনের ভীতি এবং নৈরাজ্য তৈরি করা। সেই নীলনকশা থেকেই খুনীরা তাঁর পিতাকে হত্যা করেছিল। অ্যাডভোকেট লুত্ফুল হাকিম নওরোজ আরও বলেন, ‘পিতা অপহ্নত হওয়ার পর বাবার মামাতো ভাই পারনান্দুয়ালীর আবুল কাকা, দুদু কাকা, ইকু কাকাসহ আরও অনেকেই খোঁজখবর নিতে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় লোকমারফত জানতে চেষ্টা করেন মুন্সী মুজিবর রহমানকে কোথায় রাখা হয়েছে। কিন্তু সবকিছুই বিফল হয় যখন পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পারি। দাদীও তখন এই সংবাদ পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ের। ছেলে হারানোর সেই শোক বুকে নিয়ে দাদী রহিমা খাতুন মারা যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জীবনের সেরা দুঃসময় ছিল ১৪ আগস্ট। পিতার লাশ পড়ে আছে আমরা আনতে পারিনি। সেই স্মৃতি আজও মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।’ শহীদ মুন্সী মুজিবরের বাবার নাম মরহুম মুন্সী আব্দুল হাকিম। মায়ের নাম মরহুমা রহিমা খাতুন। ৭ ভাইবোনের মাঝে তিনি ছিলেন মেঝো। তাঁর স্ত্রীর নাম মরিয়ম রহমান। শহীদ হওয়ার আগে তিনি স্ত্রী, চার ছেলে এবং তিন কন্যা রেখে যান। তাঁর চার ছেলে হলেন অ্যাড. মো. লুৎফুল হাকিম নওরোজ, মো. হাবিবুল হাকিম প্রিমরোজ, মো. নুরুল হাকিম তুহিন (প্রয়াত)এবং মো. আনোয়ারুল হাকিম শাহীন। তাঁর তিন মেয়ে হলেন-লায়লা নাজনীন আখতার, লায়লা জেসমিন আখতার, নাসিমা জেমমিন আখতার। শহীদ মুনসী মুজিবরের স্মৃতি ধরে রাখতে রাষ্ট্র কী করেছে? রাষ্ট্রের কাছে এই জীবন দান কতটা অর্থপূর্ণ? মাগুরার কোথাও এই শহীদের নামে কোনো স্মৃতিস্মারক নেই।
লেখক : সম্পাদক, মাগুরা প্রতিদিন ডটকম

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology